মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন

ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:: কুড়িগ্রামের রৌমারীতে অর্থ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা, ভূয়া রেজুলেশন, প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন না করা, নিয়োগপ্রাপ্ত উদ্যোক্তা বাদ দিয়ে নিজের পছন্দের লোক নিয়োগ, ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরবেশ আলী ও সচিব মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে। এর প্রতিকার চেয়ে (২ জানুয়ারি) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ইউনিয়নের পাঁচ সদস্য।

যাদুরচর ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মাহমুদুর রহমান, ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রবিউল হক, ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ফরমান আলী, ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ময়নাল হক ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী ও সচিব মজিবর রহমান মিলে যোগসাজস করে কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মনগড়াভাবে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব পরিষদে সভা-সমাবেশ না করে চেয়ারম্যানের বাড়িতে পরিষদের কার্যক্রম চালান। তৈরি করেন ভূয়া রেজুলেশন। এতে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।

ওই সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, ২০২১-২২ অর্থ বছরের সরকারি প্রকল্প এডিপি, টিআর, কাবিখা, কাবিটা, এলজিএসপি, ইজিপিপি, নন ওয়েজসহ নানা প্রকল্প সদস্যদের মাঝে সুষম বন্টন না করে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব মিলে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। এছাড়াও হাট-বাজার, খোয়ার-খেয়াঘাট নিলাম, টাকা, ট্যাক্সের টাকা, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ফি’র আদায় করা টাকা ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলে জমা না করে আত্মসাৎ করেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব।

লিখিত অভিযোগে ওই ইউপি সদস্যরা বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সভায় প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। ২০২২ সালের ৭ আগস্ট কুড়িগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার (ডিডিএলজি) যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদ পরিদর্শন করেন। ওই সময় প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত প্যানেল চেয়ারম্যান গঠনের তাগিদ দেন। সেটারও তোয়াক্কা করেননি ওই চেয়ারম্যান। দীর্ঘ এক বছরেও গঠন করা হয়নি প্যানেল চেয়ারম্যান।

তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে ও গরীবের পকেট কাটতে ইউনিয়ন পরিষদের নিয়োগপ্রাপ্ত উদ্যোক্তাকে বাদ দিয়ে নিজের পছন্দের প্রশিক্ষণহীন দুই ব্যক্তিকে উদ্যোক্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ওই চেয়ারম্যান। এসব উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ডাটা এন্ট্রি বাবদ সরকার কার্ড প্রতি ১৫ টাকা খরচ দিলেও তা না মেনে প্রতি উপকারভোগির কাছ থেকে নেন ৫০ টাকা করে। এতে ৪ হাজার উপকারভোগির কাছ থেকে হাতিয়ে নেন ২ লাখ টাকা।

যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সাল থেকে ইউনিয়ন পরিষদের সকল কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করে আসছিলেন। ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বরে অবৈধভাবে তাঁর কক্ষের তালা ভেঙ্গে সকল মালামাল বের করে নেন ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী। এরপর থেকে ইউনিয়নের কার্যক্রম থেকে জোর করে তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন চেয়ারম্যান। এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই উদ্যোক্তা।

যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মজিবর রহমান, ইউপি সদস্যরা যেসব অভিযোগ করেছেন, তার প্রমাণ নেই। সকল কাগজপত্র আমার কাছে। উদ্যোক্তাদের বাদ দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সব ইউপি সদস্য মিলে রেজুলেশন করেই তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে।

যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, ‘ইউপি সদস্যরা এসব অভিযোগের একটি বিষয়ের উপর যদি প্রমাণ দিতে পারে, তাহলে চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিবো।’

অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এবিএম সরোয়ার রাব্বী বলেন, এবিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অফিসিয়ালি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com